সেকেন্ড হ্যান্ড স্মার্টফোন কেনার পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন

আমাদের কাছে যাদের বেশি পরিমাণে টাকা আছে অথবা যারা দীর্ঘ সময় মোবাইল ব্যবহার করবে বলে ভাবে, তারা সবসময় মোবাইল কেনার ক্ষেত্রে নতুন মোবাইলকেই বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। কিন্তু যাদের বাজেট অনেক কম, তারা একটি স্মার্টফোন কেনার ক্ষেত্রে ভালো পুরাতন মোবাইল বা সেকেন্ড হ্যান্ড স্মার্টফোন নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আর এক্ষেত্রে পুরাতন মোবাইল কিনার জন্য তারা তাদের পরিচিতজনদের মোবাইল নিয়ে থাকে অথবা অনলাইনে বিভিন্ন স্টোর থেকে মোবাইল খুঁজে থাকে। নতুন মোবাইল কেনার ক্ষেত্রে কোন একটি শো রুম থেকে যেভাবে আমরা কোনো চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই একটি স্মার্টফোন নিতে পারি, অন্যদিকে একটি পুরাতন স্মার্টফোন কেনার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা মোটেই সহজ না। 
সেকেন্ড হ্যান্ড স্মার্টফোন কেনার পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন

তবে আপনি কোন একটি পুরাতন মোবাইল যদি কিনতে চান, তবে বর্তমানে হয়তোবা এটি অনুসন্ধান করতে বেশি সময় লাগবে না। কেননা বর্তমানে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে অথবা ফেসবুক বিজ্ঞাপণে অনেকে পুরাতন মোবাইল বিক্রি করে। নতুন মোবাইল কেনার জন্য এক্ষেত্রে নির্ভরশীল একটি সাইট হতে পারে bikroy.com অথবা ফেসবুকের কোন গ্রুপ। কিন্তু আপনি অনলাইনে যেসব মানুষের কাছ থেকে পুরাতন বা সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল নামে যে ফোনটি ক্রয় করছেন এটি কি আসলেই আপনার জন্য নিরাপদ?

আপনি বিভিন্ন সাইট থেকে যে সেকেন্ডহ্যান্ড বা পুরাতন মোবাইল টি কিনলেন, এটি কি আপনাকে নিরাপদে থাকতে দিবে? এখানে অবশ্যই মোবাইলটি ব্যবহারে প্রযুক্তিগত সমস্যার পাশাপাশি আইনি জটিলতার কথা বলছি। আপনি সেই মোবাইলটি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে হ্যাং হয়ে যাবে বা কিছুদিন পর নষ্ট হয়ে যাবে এরকম আরোও অনেক  সমস্যায় পড়তে পারেন এটি স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে পুরাতন মোবাইল কিনে আপনি কিন্তু জেলেও যেতে পারেন।

সেকেন্ড হ্যান্ড অ্যান্ড্রয়েড ফোন কেনার সময় যেসব বিষয় খেয়াল রাখা উচিত

সেকেন্ড হ্যান্ড অ্যান্ড্রয়েড ফোন কেনার অনেক সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। এই পোস্টে ব্যবহৃত অ্যান্ড্রয়েড ফোন কেনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ জানতে চলেছেন। চলুন তাহলে বিষয়গুলো জানা যাক-

১/ স্মার্টফোনটি কেনার রশিদ দেখুন
বর্তমানে চুরি করা ফোন বিক্রি নিয়ে বেশ সমস্যা বেড়েছে। যেকোনো দোকান হোক বা অনলাইনে পাওয়া কারো কাছ থেকে পুরোনো ফোন কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই সাবধান থাকা উচিত। চুরির ফোন কেনার ফলে আইনি ব্যবস্থার সম্মুখীন পর্যন্ত হতে পারেন। কোনো ব্যক্তি যদি তার বিক্রি করা ফোন কেনার রশিদ দেখাতে না পারে, তাহলে উক্ত ফোন কেনা থেকে বিরত থাকা উত্তম।

আরো ভালো হয় যদি ফোন কেনার সময় বক্সসহ প্রদান করা হয়। ফোনের বক্সের সাথে ডিভাইসের আইএমইআই কোড মিলিয়ে দেখুন। ফোনের আইএমইআই ও বক্সের আইএমইআই কোড না মিললে সে ক্ষেত্রে উক্ত ফোন কেনা থেকে বিরত থাকুন। যেকোনো ফোনে *#06# ডায়াল করে আইএমইআই কোড দেখতে পারবেন।


২/ ফিজিক্যাল ড্যামেজ চেক করুন
স্মার্টফোন এর মত অতিরিক্ত ব্যবহার হয় এমন বোধহয় আর অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস নেই। অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে অনেক সময় ফোন ফিজিক্যাল ড্যামেজ এর শিকার হয়, যার কারণে পুরোনো ফোন কেনার আগে অবশ্যই ফোনে কোনো ধরনের ফিজিক্যাল ড্যামেজ আছে কিনা তা চেক করা জরুরি।

আপনার যদি কোনো পুরোনো ফোন কেনার জন্য পছন্দ হয়ে যায়, তবে ফোনের ব্যাকে কোনো ধরনের স্টিকার বা স্কিন থাকলে তা তুলে ফেলে ফোনে কোনো ধরনের ড্যামেজের প্রমাণ আছে কিনা তা চেক করুন। ফোনের স্ক্রিনে কোনো ধরনের গুরুতর সমস্যা বা স্ক্র‍্যাচ আছে কিনা তা চেক করতে পারেন টেম্পরারি গ্লাস খুলে ফেলে।

ব্যবহৃত ফোন কেনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে সেরা উপায় হলো নিজে স্বশরীরে গিয়ে দেখে কেনা। স্বশরীরে গিয়ে ফোন কিনলে তা চেক করে নেওয়ার সুযোগ থাকে। তাই ভালো হয় সরাসরি অনলাইন থেকে পুরোনো ফোন অর্ডার করা থেকে বিরত থাকা।

৩/ ফোনের ডিসপ্লে চেক
এখন কথা হল ফোনে ডিসপ্লেটি কিভাবে চেক করবেন? ফোনটি হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ চালাবেন। দেখবেন ডিসপ্লের সব জায়গা ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা। ব্যাকগ্রাউন্ডে অনেকগুলো অ্যাপ চালু করে গেম খেলবেন ভিডিও স্ট্রিমিং করবেন। এ সময় দেখবেন ফোনটি হ্যাং হয় কিনা বা অতিরিক্ত গরম হচ্ছে কিনা। যদি ফোনটি হ্যাং হয় বা অতিরিক্ত গরম হয় তাহলে সে ফোনটি কিনবেন না। কেনার সময় অবশ্যই আপনি ১৫-২০ মিনিট ব্যাবহার করে দেখে নিবেন, তাহলে কোনো সমস্যা থাকলে হয়তবা তা আপনার চোখে পড়বে। যেমন মনে করুন, ব্যাটারি ব্যাকআপ, টাচ রেসপন্স কেমন, ফোন অতিরিক্ত হিট হয় কিনা, চলতে চলতে বন্ধ হয়ে যায় কিনা ইত্যাদি।

৪/ অরিজিনাল চার্জার ও কেবল
ফোনের বক্সে থাকা চার্জার এর চেয়ে বিশ্বস্ত কোয়ালিটির কিছুই হয়না। তাই পুরোনো ফোন কেনার সময় অবশ্যই ফোনের সাথে থাকা অরিজিনাল চার্জার ও ডাটা কেবল দাবি করুন। এর ফলে ফোনের সিকিউরিটি সম্পর্কে অধিক নিশ্চিত হওয়া যায়, আবার নতুন চার্জার কিনতে আপনাকে বাড়তি অর্থ খরচ করতে হবেনা। বিক্রেতা যদি চার্জার প্রদান করতে ব্যার্থ হয়, তবে তার দাম নিয়ে নেগোসিয়েশন করতে পারেন।

৫/ ব্যাটারি পরীক্ষা করুন
সাধারণ লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারিগুলো কতদিন ভালোভাবে কাজ করবে তা ব্যবহারের উপর নির্ভর করে। ফোনের বয়স যদি এক বছরের অধিক হয়, তবে কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যাটারি পরীক্ষা করা উচিত। যেহেতু অনেক অ্যান্ড্রয়েড ফোনে আইফোনের মত কোনো ব্যাটারি হেলথ অপশন নেই, তাই এখানে আপনাকে নিজেই পরীক্ষা করে নিতে হবে।

ফোন ৫-১০মিনিট ভালোভাবে পরীক্ষা করুন ও কোনো ধরনের দ্রুত ডিসচার্জ এর বিষয় রয়েছে কিনা তা লক্ষ্য করুন। ফোনের ব্যাটারি বেশি খারাপ হলে তা পরিবর্তন এর প্রয়োজন পড়তে পারে। তবে ব্যাটারি কন্ডিশন ভালো নয় এমন ফোন না কেনা উত্তম।

৬/ নেটওয়ার্ক চেক
আপনি প্রথমে SIM 1 এ সিম প্রবেশ করিয়ে কারো সাথে কথা বলবেন। কথা বলার সময় ওর কথা আপনি ভালোভাবে শুনতে পাচ্ছেন কিনা চেক করবেন এবং আপনার কথা ও ভালোভাবে শুনতে পাচ্ছি কিনা চেক করবেন। এরকমভাবেই সিম টু স্লট পরীক্ষা করে নিবেন। অনেক সময় দেখা যায় ফোনের একটি সলট সঠিকভাবে কাজ করলেও অন্য স্লটটি নেটওয়ার্ক কাজ করে না। মূলত ফোনটি হাত থেকে পড়ে গেলে এরকম সমস্যা হয়ে থাকে। তাই এই বিষয়টি অবশ্যই চেক করে নিবেন। মোবাইল ডাটা অথবা ওয়াইফাই অন করে ফোনটি চালাবেন দেখবেন নেটওয়ার্ক সঠিকভাবে কাজ করে কিনা।

৮/ ফোন রিপেয়ার করা হয়েছে কিনা জানুন
ব্যবহৃত ফোন কেনার সময় ফোন রিপেয়ার করা হয়েছে কিনা তা জানা বেশ জরুরি। কোনো ফোন যদি অনেকবার রিপেয়ার করা হয়ে থাকে, তাহলে তা কেনা থেকে বিরত থাকা উচিত। ফোন রিপেয়ার হয়েছে কিনা তা বুঝার সহজ উপায় হতে পারে ফোনের ফ্রেম ও ডিসপ্লে।

ফোন যদি আনপ্রফেশনাল টেকনিশিয়ান দ্বারা রিপেয়ার করা হয়ে থাকে, তবে খুব সহজে রিপ্লেস করা গ্লাস দেখতে পাবেন। যেসব ফোন একাধিকবার রিপেয়ার করা হয়েছে, উক্ত ফোনগুলো থেকে দূরে থাকা উত্তম।

৯/ সকল কম্পোনেন্ট কাজ করছে কিনা চেক করুন
সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই ধৈর্য সহকারে ফোন চেক করতে হবে। ফোন হাতে পাওয়ার পর নিচে উল্লেখিত বিষয়গুলো ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা চেক করুন।
  1. পাওয়া বাটন ও ভলিউম বাটন।
  2.  চার্জিং পোর্ট (চার্জ হচ্ছে কিনা চেক করুন) এবং হেডফোন জ্যাক।
  3. ব্যাক ও ফ্রন্ট ক্যামেরার পারফরম্যান্স।
  4. কলের সময় প্রক্সিমিটি সেন্সর কাজ করে কিনা।
  5. ব্রাইটনেস ফুল করলে ডিসপ্লে ঠিকভাবে কাজ করে কিনা।
  6. স্পিকার বা সাউন্ড কোয়ালিটি।
১০/ ফোন কত পুরোনো তা চেক করুন
পুরোনো ফোন কেনার ক্ষেত্রে উক্ত ফোনের বয়স জানতে পারবেন বিক্রেতার কাছ থেকে প্রাপ্ত ফোন কেনার রশিদ থেকে৷ এছাড়া ফোনের অবস্থা দেখেও ফোন কত সময় ধরে কি পরিমাণে ব্যবহৃত হয়েছে তা ধারণা করা যায়। মোবাইল যত পুরনো হবে ততই নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আপনাদের বাজেট অনুযায়ী যেগুলো যত অল্পদিনের ফোন সেগুলো কেনা চেষ্টার করবেন। চার্জার, বক্স, ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যদি বিক্রেতা প্রদান করতে না পারে তাহলে উক্ত ফোন না কেনা শ্রেয়।

এছাড়া যে ফোনটি কিনতে যাচ্ছেন উক্ত ফোন যদি বেশি আগের মডেল হয়ে থাকে, তবে সেটি কেনা থেকে বিরত থাকুন। বেশি আগের ফোনগুলো অনেক আগে তৈরী হয়ে থাকে, যার ফলে সময়ের সাথে সাথে ফোনগুলোর পারফরম্যান্স বর্তমান সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে উঠতে পারেনা।

১১/ সর্বশেষ ফোনটির প্রাইস নির্ধারণ করা
দর কষাকষি করার সময় মনে রাখবেন কম দাম মানেই ভাল চুক্তি নয়। যদি ফোনটি ভাল অবস্থায় থাকে ও এর সব আনুষাঙ্গিক ডিভাইস সহ পাওয়া যায়, তবে এটি কিছুটা অতিরিক্ত মূল্য দিয়েও নিতে পারেন। ফোনের দাম ঠিক করবেন ফোনের বয়স কত দিন বা মাস বা বছর+বর্তমানে কেমন অবস্থা তার উপর ভিত্তি করে।

শেষ কথা:
আজকের পোস্টে সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল কেনার আগে কি কি বিষয় দেখে নেওয়া প্রয়োজন সেগুলো বিষয় আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি। উল্লেখিত বিষয়গুলো অনুসরণ করে ব্যবহৃত অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনলে আশা করি ঠকবেন না। সবাই ভালো থাকবেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post