সহজে ইউটিউব থেকে আয় করার উপায় সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন
দুনিয়া জুড়ে ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম হিসাবে ইউটিউব বহুল ব্যবহৃত একটি প্ল্যাটফর্ম। এর ব্যবহার কি মাত্রায় হয় তা সহজেই বোঝা যায় কিছু পরিসংখ্যান থেকে। মূলত ব্যবহারের দিক থেকে ফেসবুকের পরে ইউটিউবের অবস্থান। প্রতি মিনিটে এই প্লাটফর্মটিতে ৫০০ ঘণ্টার ভিডিও আপলোড হয় এবং প্রতিদিন আমরা এখানে ১ বিলিয়ন ঘণ্টার উপরে ভিডিও দেখছি।
এর জনপ্রিয়তা অন্যান্য উন্নত দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও এর ব্যবহার বেড়েই চলেছে। অনেক বড় বড় ইউটিউবার এখন বাংলাদেশেও আছে। বিনোদনের মাধ্যম হিসাবে এর কোন বিকল্প নেই বাংলাদেশে এখন।
ইউটিউব যেমন আমাদেরকে নিয়মিত বিনোদন দিয়ে আসছে একই ভাবে কিছু মানুষের জীবিকার মাধ্যম হিসাবে কাজ করছে এই ইউটিউব। আপনার মাথায় যদি এমন কোনো কন্টেন্ট থাকে যা আপনি মনে করছেন মানুষের কাছে শেয়ার করলে খুব ভালো সাড়া পাওয়া যাবে, চাইলে আপনিও ইউটিউবিং শুরু করতে পারেন। বাংলাদেশে অনেক মানুষেরই ছোট বড় অনেক চ্যানেল আছে যারা এই ইউটিউব এর মাধ্যমে মাসে বেশ ভালো অংকের টাকা ইনকাম করছে।
শুধু তাই নয়, কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করতে আজকাল অনেকেই প্রফেশনাল কোর্স করে বিষয়টিকে নিজের প্যাশন ও প্রফেশন হিসেবে গ্রহন করছেন।
তাই এসব জানার পরে অনেক মানুষই এখন ইউটিউবে একাউন্ট খুলে ভিডিও বানানো শুরু করছে। কিন্তু তাদের অনেকেই জানেনা কিভাবে আয় আসবে। এই আর্টিকেলটিতে মূলত আমরা সে বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করব।
আপনি শুনে অবাক হবেন যে, শুধু মাত্র ইউটিউব থেকেই প্রতি মাসে আয় হাজার হাজার ডলার আয় করা সম্ভব। তবে অনেকেই ইউটিউব চ্যানেল খুলেন কিন্তু কেন সবাই Vlad and Nikita অথবা Dude Perfect হতে পারে না। তার একমাত্র কারন হলো সবার এই বিশাল ইউটিউব জগৎটা নিয়ে তেমন কোন ধারণা থাকে না।
শুধু মাত্র ইউটিউব থেকে টাকা ইনকামের পিছনে ছুটলেই হয় না। অবশ্যই আপনার কন্টেট, চ্যানেল সব কিছুকে ইনকামের উপযোগী করতে হবে। তবেই আপনি ইউটিউবে সফল হতে পারবেন। ইনকাম করতে পারবেন ইউটিউব থেকে হাজার হাজার ডলার।
আজকের এই আর্টিকেলে আপনাকে শেখানো হবে ইউটিউব চ্যানেল খোলা থেকে শুরু করে ইউটিউব থেকে ইনকামের আগ পর্যন্ত যা যা করতে হবে। এবং সর্বশেষে রয়েছে এমন কিছু ট্রিকস যেগুলো আপনার ইউটিউব পথচলাকে করবে আরও সহজ থেকে সহজতর। সেজন্য আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
ইউটিউব থেকে আয় কারা করতে পারবে?
আপনার কাছে কি মনে হয় youtube থেকে টাকা ইনকাম সবাই করতে পারবে? তার সহজ উত্তর হলো “না”।
সবাই ইউটিউবে টাকা আয় করতে পারবে না শুধুমাত্র Content Creators (যারা ভিডিও তৈরি করে) তারাই পারবে। যারা ইউটিউব এ নানা বিষয় সম্পর্কিত ভিডিও তৈরি করে তারাই Content Creator।
কিভাবে Content Creator হওয়া যাবে?
Content Creator হওয়ার জন্য আপনার Gmail একাউন্ট অ্যাকাউন্ট লাগবে। যা দিয়ে আপনি একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করবেন। তারপর আপনি ইচ্ছা করলে আপনার হাতে থাকা স্মার্ট ফোন দিয়েই ভিডিও বানিয়ে আপলোড দিতে পারেন ইউটিউব এ। আপনাকে অবশ্যই এমন একটি বিষয়ে ভিডিও বানাতে হবে যেটি দেখতে মানুষ পছন্দ করে/বা মানুষের খুব প্রয়োজন।
ইউটিউব চ্যানেল তৈরির আগে যেগুলো জানা দরকার
>>> সঠিক বিষয় নির্বাচন:-
আপনি কোন বিষয়ের উপর ভিডিও বানাবেন সেটা আগে ঠিক করুন। বিষয় নির্বাচনের সময় অবশ্যই আপনাকে এমন বিষয় নির্বাচন করতে হবে যেটির অনেক হাই CPC এবং CPM রয়েছে। আর এমন বিষয় নিয়েই কাজ করবেন যেটাই আপনার আগ্রহ আছে।
কারন যদি আপনার আগ্রহ না থাকে জোর করে বেশিদিন করতে পারবেন না। তাই আগে নিজের আগ্রহকে খুজুন। কয়েকটি ভিডিওর বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি যেগুলোতে খুব বেশি CPC,CPM পাওয়া যায়।
অনেকেই আবার প্রশ্ন করেন, ইউটিউবে কী কী বিষয়ে ভিডিও তৈরী করলে ভালো হবে? যাদের এই প্রশ্নটি আছে তারা নিচের বিষয়গুলো দেখতে পারেন।
১/ টেক রিভিউ :-
টেক রিভিউ হলো টেকনোলজিকাল কোন ডিভাইস (যেমন:- মোবাইল, পিসি) রিভিউ করা। এসব চ্যানেল থেকে খুব ভালো আয় করা যায়। এখানে যেমন Adsence এর মাধ্যমে ইউটিউব থেকে ইনকাম ভালো হয় তেমন মার্কেটিং থেকে ভালো ইনকাম হয়। এসব চ্যানেল গুলোই প্রায় ইনকাম হয় Sponsorship থেকে।
২/ টিউটোরিয়াল ভিডিও :-
যদি আপনার কোন বিষয়ে অনেক ভালো জ্ঞান থাকে তাহলে ঐ জ্ঞান মানুষকে ভিডিওর মাধ্যমে শেয়ার করলে তাই হলো টিউটোরিয়াল ভিডিও। যদি আপনারও এমন ভালো কিছুর সম্পর্কে জ্ঞান থাকে তাহলে বানিয়ে ফেলুন টিউটোরিয়াল ভিডিও এবং আয় করুন।
৩/ হেল্থ এন্ড বিউটি টিপস :-
মানুষ ইউটিউবে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ভিডিও বেশি দেখে এবং গুগোল Adsence ও ভালো CPC, CPM দেশই এসব চ্যানেলে। এখানে বিভিন্ন স্বাস্থ্যা সম্পর্কিত তথ্য দিয়ে ভিডিও বানানো হয় (যেমন :- কোন খাবার খেলে কি হয়। ত্বকে কি ব্যবহার করলে ত্বক ভালো থাকবে) । আপনি হয়ত ভাবছেন আপনি তো জানেন না এই বিষয়ে তাহলে কেমনে বানাবেন ভিডিও। আপনি যে বিষয়ে ভিডিও বানাবেন আপনাকে ঐ বিষয় নিয়ে কয়েকদিন রিসার্চ করে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে তবেই আপনি ভিডিও বানাতে পারেন।
৪/ App রিভিউ :-
আমরা সবাই মোবাইলে কম বেশি App ব্যবহার করি যদি এসব app ব্যবহার করার পর আমরা একটি রিভিউ দিই ইউটিউব এ তাহলে হয়ে যাবে App রিভিউ চ্যনেল। এক্ষেত্রে Adsence + App sponsorship দুটি থেকেই আয় সম্ভব।
৫/ ট্রাভেল ব্লগ :-
যদি আপনি ভ্রমন প্রিয় হয়ে থাকেন তাহলে এটি আপনার জন্য। আপনি চাইলেই কোথাও ঘুরতে গেলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব কিছু নিয়ে একটি ভিডিও বানালেন। হয়ে গেল ট্রাভেল ব্লগ।
৬/ Gaming চ্যানেল :-
বর্তামানে অনলাইন গেইম গুলো অনেক বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করছেন এবং মানুষের মধ্যে। যদি আপনার অনলাইন গেমের প্রতি ভালো পারদর্শিতা থাকে তাহলে লাইভ স্ট্রিমিং বা ছোট খাটো ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতে পারেন।
ইউটিউব চ্যানেল কিভাবে খুলব?/ ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম
Step 1:-
ইউটিউব চ্যানেল খুলতে হলে আপনার একটি জিমেইল একাউন্ট খুলতে হবে যেটিতে অবশ্যই আপনার সঠিক তথ্য দিয়ে খোলা সম্পূর্ন ভেরিফাইড জিমেইল একাউন্ট হতে হবে।
Step 2 :-
ইউটিউব এ গিয়ে উক্ত জিমেইল দিয়ে Sing in করতে হবে। তারপরে উপরের দিমে বাম কোনে আপনার একাউন্টের ছবি দেখা যাবে ওখানে ক্লিক করে Your channel লিখায় ক্লিক করে আপনার পছন্দের নাম দিয়ে খুলে ফেলুন ইউটিউব চ্যানেল।
Trick :- চ্যানেলের নাম সব সময় ছোট রাখার চেষ্টা করবেন এবং আপনি যে বিষয়ে ভিডিও বানাবেন সেই রিলেটেট নাম দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
হয়ে গেল ইউটিউব চ্যানেল এখন আপনাকে ভিডিও বানাতে হবে ভিডিও বানানোর ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যেমন :-
ইউটিউবে ভিডিও বানাতে প্রয়োজনীয় উপকরণ:
ইউটিউব চ্যানেল বানিয়ে ভিডিও আপলোড করার জন্য আপনার কাছে কিছু বেসিক জিনিসের প্রয়োজন যেগুলি ছাড়া আপনি ভিডিও বানাতে পারবেন না। যেমন: কম্পিউটার বা ল্যাপটপ, মোবাইল, ক্যামেরা ইত্যাদি।
১/ ভিডিও বানানোর আগে আপনাকে একটি স্ক্রিপ্ট রেডি করতে হবে। স্ক্রিপ্ট হলো আপনি ভিডিওতে কি কি বলবেন কোন টপিকে বলবেন তা একটি কাগজে আগে নোট করা। এটি আপনার ভিডিওকে দিবে প্রোফেশনালিটি এবং আপনার ভিডিও হবে সুন্দর এবং গোছানো।
২/ একবারেই পুরো ভিডিও না করে খন্ড খন্ড করে করুন ভিডিও। নতুনদের জন্য এটি বেশি কার্যকরি।
৩/ ভিডিওতে ব্যবহার করুন কোমল এবং সুন্দর বেকগ্রাউন্ড মিউজিক। যেটি আপনার দশর্কের ভিডিও দেখার প্রতি আর্কষনকে আরো বাড়িয়ে তোলবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে কপিরাইট ফ্রি মিউজিক ব্যবহার করতে হবে।
৪/ ভিডিওটি যে সব বিষয় রাখা যাবে না
ইউটিউবে কোন ধরনের ভিডিও আপলোড করা যাবে না তার জন্য youtube এ সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। একে বলে ইউটিউব কমিউনিটি গার্ডলাইন। কিন্তু আপনাকে আয় করার ক্ষেত্রে কমিউনিটি গাইলেনসহ আরো কিছু নিয়ম মানতে হবে। যাকে বলে পাবলিশার পলিসি। মনে রাখবেন আপনার ইনকামটা হবে মূলত বিজ্ঞাপন দেখানো ডলার থেকে। কিন্তু আপনার ভিডিওটি যদি বিজ্ঞাপন দেখানোর উপযোগী না হয় তাহলে আপনার মনিটাইজেশন সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেবে কর্তৃপক্ষ। চলুন জানা যায় মনিটাইজেশন বন্ধ হওয়া থেকে বাঁচতে কি কি করণীয়
- কোন ধরনের বাজে ভাষা ব্যবহার করা যাবে না
- অতিরিক্ত যৌনতা থাকবে না
- অন্যের প্রতি ঘৃণা বা বিদ্বেষী খা ছড়ায়য তেমন কিছু দেখানো যাবে না।
- বিতর্কিত এবং স্পর্শ কাদার বেশি এড়িয়ে চলতে হবে
বানানো হলো ভিডিও এখন ভিডিও এডিট এবং আপলোড করতে হবে।
ভিডিও এডিট এন্ড আপলোড
ইউটিউবে সফল হতে গেলে বা Youtube থেকে আয় পুরোটাই নির্ভর করে ইউটিউব ভিডিও কনটেন্ট এর উপর। আর কনটেন্ট নির্ভর করে ভিডিও কোয়ালিটি উপর। আর কোয়ালিটির অনেক বড় একটা অংশ নির্ভর করে ভিডিও এডিটিং এর উপর।
ইউটিউবে ভিডিও এডিটিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভিডিও ভিউস পাওয়ার ক্ষেত্রে। সেজন্য ভালো একজন ইউটিউবার হতে গেলে ভালো একজন ইউটিউব ভিডিও ইডিটর হওয়া করা গুরুত্বপূর্ণ।
ভিডিও এডিট
১) এডিটের ক্ষেত্রে যেকোন এপ ইউজ করতে পারেন। প্রথমেই আপনার খন্ডায়িত ভিডিও ক্লিপ গুলোকে একত্রে করুন।
২) আপনার টপিক রিলেটেড একটি সুন্দর ইনট্রো থাকতে হবে ভিডিওতে। অনেক ফ্রি ওয়েবসাইট/মোবাইল এপ থেকে এই ইনট্রো বানাতে পারেন।
৩) যদি আপনি সঠিক এবং নিখুঁত ভাবে ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তন করতে পারেন তবেই করবেন আর না হলে কোন সাদা বা কালো কাপড়কে ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে ব্যবহার করুন। কারন সঠিক ভাবে ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তন করতে না পারলে আপনার ভিডিও প্রোফেশনালিটি এবং ভিউস দুটিই হারাবে।
ভিডিও আপলোড
১) আর্কষনীয় টাইটেল খুজে বের করে নিয়ে ঐ চিঠিতে থাকা গোপন পিন দিয়ে আপনার একাউন্ট ভেরিফাই করতে হবে।
তারপরে আপনার Bank একাউন্ট যুক্ত করবেন Adsence এর সাথে। তারপরেই প্রতি মাসের ২১-২৫ তারিখের মধ্যে আপনি আপনার ব্যাংক একাউন্টে টাকা নিতে পারবেন। টাকা উত্তলনের জন্য ১০০ ডলার Adsence একাউন্টে থাকা বাধ্যতামূলক।
Google Adsence দিয়ে ইউটিউব থেকে কত টাকা আয় করা যাবে?
গুগল Adsence টাকা দেই CPM (cost per miles) এবং CPC (Cost per click) এর ভিত্তিতে।
CPM কি?
আপনার ভিডিতে থাকা বিজ্ঞাপনটি যদি ১০০০ মানুষ দেখে তাহলে আপনি কি পরিমান করবেন তাই হলো CPM। মনে করুন আপনার CPM 2 ডালার তার মানে আপনার ভিডিওতে থাকা বিজ্ঞাপনটি ১০০০ জন দেখলে আপনার ইউটিউব আয় ২ ডলার হবে।
CPC কি?
আপনার ভিডিওতে থাকা বিজ্ঞাপনটিতে ১ জন ক্লিক করলে কি পরিমান করবেন তাই CPC। যেমন :-মনে করুন আপনার CPC ১ ডলার তার মানে কোন একজন মানুষ যদি আপনার ভিডিও দেখার সময় বিজ্ঞাপনে ক্লিক করেন আপনি ১ ডলার আয় করবেন।
এই CPC এবং CPM যত বেশি হবে আপনার আয় তত বেশি হবে। CPC এবং CPM নির্ভর করে আপনার ভিডিওর টপিকের উপর। যেমন হেল্থ টেকনোলজি এসব বিষয় নিয়ে ভিডিও বানালে CPC এবং CPM অনেক বেশি পাওয়া যায়। এমন আরো অনেক বিষয়ই রয়েছে এমন হাই CPC এবং CPM’র তা জানার জন্য আপনাকে ভিডিও তৈরির পূর্বে অবশ্যই রিসার্চ করতে হবে।
CPC এবং CPM দেশভেদে ও ভিন্ন হয়। যেমন বাংলাদেশের CPC কম কিন্তু USA ‘র CPC অনেক বেশি। কিন্তু সঠিক টপিক নির্বাচন করতে পারলে বাংলাদেশে অনেক হাই CPC,CPM পাওয়া যায়।
আমি এতক্ষণ যেগুলো নিয়ে আলোচনা করলাম এগুলো যারা নতুন করে শুরু করবেন তাদের জন্যই প্রয়োজন। এরপর আমি যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব সেগুলো অনেক কঠিন এবং অনেক কঠিন পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু তাও জানার জন্য আমি উল্লেখ করলাম
মার্কেটিং করে ইউটিউব থেকে টাকা আয়
আগেই বলেছি ইউটিউব এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে হাজার হাজার মানুষের সমাহার প্রতিদিন তাই এটি হতে পারে মার্কেটিং করার সবচেয়ে উপযুক্ত একটি জায়গা। এজন্য মার্কেটিং করেও ইউটিউব থেকে অর্থ আয় করতে পারেন। চলুন জেনে আসা যাক কিভাবে।
নিজের প্রোডাক্ট/ সার্ভিস মার্কেটিং
আপনি চাইলে আপনার পণ্য বা সেবা আপনার দর্শকদের কাছে বিক্রি করতে পারেন। আপনি আপনার পণ্য বা সেবার ভালো মন্দ দিক গুলো দর্শকের কাছে ভিডিওর মাধ্যমে প্রকাশ করে দর্শককে উক্ত সেবা / পণ্যটি কিনতে আগ্রহী করে তুলতে পারেন। যার ফলে আপনি খুব ভালো পরিমান অর্থ ইউটিউব হতে আয় করতে পারবেন।
বর্তমানে অনেক Content Creators’রাই এটি করছেন এবং খুব ভালো ইউটিউব থেকে আয় করছেন। আপনি চাইলে আপনি যে বিষয়ে দক্ষ সে বিষয়ের উপর একটি কোর্স বানিয়ে বিক্রি করতে পারেন। চলুন দেখে আসি কিভাবে আপনার প্রোডাক্ট/সার্ভিস মার্কেটিং করবেন
Step 1 :-
আপনাকে আগে এমন একটা পণ্য নির্বাচন করতে হবে যেটায় আপনার দর্শকের আগ্রহ আছে। যেমন আপনি যদি টেকনোলজি নিয়ে ভিডিও বানান তাহলে আপনার দর্শক তারাই থাকবে যাদের টেকনোলজি নিয়ে আগ্রহ আছে।
এখন আপনি যদি তাদের হেল্থ রিপিটেড কোন পণ্য কিনতে বলেন আপনার সেলস খুবই কম আসবে এবং অনেক দর্শকই এটা বিরক্তিকর মনে করবে। তাই আপনার চ্যানেল টপিক অনুযায়ী পণ্য সিলেক্ট করুন
Step 2:-
আপনার পণ্য কোন সমস্যার সমাধান দিতে পারবে তা বের করুন। এবং ঐ সমস্যা নিয়ে একটি ভিডিও বানান এবং সমস্যার সমাধান হিসেবে আপনার পন্য সাজেস্ট করুন।
যেমন :- মনে করুন আমি হেল্থ রিলেটেড টপিক নিয়ে কাজ করি এবং আমার কাছে একটি প্রোডাক্ট আছে ডাব সেম্পু। এখন এই প্রোডাক্টটি চুল পড়া কমায় অর্থাৎ চুল পড়ার সমস্যার সমাধান এটি। তাই চুল পড়া নিয়ে একটি ভিডিও বানাব যেটায় আমি ডাব সেম্পু সাজেস্ট করব।
কিন্তু সমস্যার সমাধান হিসেবে যদি শুধুই নিজের পণ্য দেন অনেকেই বুঝে যাবে আপনার মার্কেটিং টেকনিক। তাই অনেক গুলো সমাধানই দিবেন যার মধ্যে একটি সমাধান হলো আপনার পণ্যটি। এবং ডেসক্রিপশনে আপনার পণ্যের লিংক দিবেন।
Step 3:-
আপনার পণ্যের লিংক কোথায় পাবেন?
আপনি একটা ওয়েব সাইট খুলবেন যেখানে আপনার পণ্যটি থাকবে এবং পণ্য সম্পর্কিত আরো কিছু লিখা থাকবে এবং পণ্য অডার করার একটি অপশন থাকবে।
এই ওয়েবসাইট তৈরির মূল উদ্দেশ্য হলো আপনি আপনার ভিডিওতে আপনার পণ্য সম্পর্কে বেশি কিছু বলতে পারবেন না কারন দর্শক বিরক্ত হবে তাই আপনি ওয়েবসাইটে লিখবেন।
যারা আপনার পণ্যের প্রতি আগ্রহী তারাই যাবে আপনার ওয়েবসাইটে এবং ওয়েবসাইটের পণ্যের বিবরণী তাকে পণ্য কিনতে আগ্রহী করবে।
Step 4:
অর্ডার নেওয়ার সময় অবশ্যই আপনার কাসটমার থেকে ইমেল বা মোবাইল নাম্বার নিবেন। তার কারণ হলো যে অর্ডার করবে সে এমন একজন ব্যাক্তি যার চুল পরার সমস্যা আছে এবং তিনি সেম্পু রিলেটেড প্রোডাক্টের প্রতিও আগ্রোহী।
আপনি চাইলে অনেক ইমেইল কালেক্ট করে তা ঐ রিলেটেড পণ্যের কোম্পনির কাছে বিক্রি করতে পারবেন বা আপনি পরবর্তীতে এমন পণ্য বিক্রি করলে তা সম্পর্কে ঐসব ইমেইলে মার্কেটিং করতে পারবেন। একে বলে ইমেইল মার্কেটিং।
এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে ইউটিউব থেকে আয়
মনে করুন আপনার কোন পণ্য/সার্ভিস নেই তাহলে কি আপনি মার্কেটিং করতে পারবেন না? অবশ্যই পারবেন। আপনি অন্যের পণ্য মার্কেটিং করবেন এবং প্রতি সেলসের উপর কমিশন নিবেন।
এভাবে অন্যের পণ্যের মার্কেটিং করে প্রতি সেলসের উপর কমিশন নেওয়াকে এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলে। বর্তমানে এটি Content Creators দের খুবই জনপ্রিয় একটি ইউটিউব থেকে আয় এর মাধ্যম। অনেকে মনে করেন এটির মাধ্যমে আপনি ঘুমানো থাকা অবস্থায় ও ইউটিউব থেকে ইনকাম করতে পারবেন। অনেকে আবার এটিকে Autopilot system ও বলে। চলুনন একটু ভালোভাবে বিষয়টি বুঝি।
মনে করুন আপনি বাংলাদেশের জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস Daraz এর এ্যাফিলিয়েট মার্কেটার। তাহলে Daraz আপনাকে একটি লিংক দিবে যেটি হবে আপনার এ্যাফিলিয়েট লিংক। আপনার উক্ত লিংক থেকে কেউ কিছু কেনা কাটা করলে আপনি কমিশন পাবেন।
আপনি এই লিংকটি আপনার ভিডিও ডেসক্রিপশনে রেখে আপনার দর্শকদের ঐ লিংক থেকে কেনা কাটা করার জন্য উৎসাহিত করুন। এভাবেই আপনার আয় হবে।
এমন অনেক অনলাইন মার্কেট আছে যেমন আপনি ইন্টারনেশনাল কোন টপিক নিয়ে ভিডিও করলে Amazon এর এ্যাফিলিয়েটে যুক্ত হতে পারেন।
Amazon যেহেতু বাংলাদেশে নেই তাই বাংলাদেশি কোন কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করলে Amazon এর লিংক দেওয়া যাবে না করন তখন আপনার দর্শক হবে শুধু বাংলদেশীরা। বাইরের দেশের খুব কমই হবে।
কিন্তু যদি আপনি ইংরেজিতে ভিডিও বানান তাহলে এটি হতে পারে আপনার জন্য অনেক সম্ভাবনাময় একটি পদ্ধতি কারন এমন কিছু মার্কেটপ্লেস আছে যার আপনাকে প্রতি সেলস এর অনেক হাই কমিশন দিবে।
যেমন : প্রতি সেলসে ৩০-৫০ ডলার। কিন্তু এসব মার্কেটপ্লেস গুলো প্রায়ই ইউরোপ কেন্দ্রীক। তাই যদি আপনার দর্শক ইউরোপ কেন্দ্রীক হয় তাহলে আপনি এসব হাই কমিশন রেট প্রোডাক্ট মার্কেটিং করতে পারেন। এসব প্রোডাক্টেরর জনপ্রিয় কিছু মার্কেট হলো Click bank, Warriorplus।
নিজের পণ্য মার্কেটিং করতে যেসব স্টেপ বলেছি তা এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ক্ষেত্রেও অনুসরণ করতে হবে।
Sponsorship দ্বারা YouTube থেকে আয়
অনেক কোম্পানি তাদের প্রচারের জন্য কন্টেন্ট ক্রিয়েটরসদের বেছে নেন। কারন আপনার দর্শকদের কাছে আপনি প্রিয় তাই আপনি যদি কিছু মার্কেটিং করেন তাহলে আপনার দর্শকের ঐ বিষয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়বে তাই
ঐসব কোম্পানি কন্টেট ক্রিয়েটরসদের টাকা দিয়ে তাদের প্রচারের কাজ করান। এক্ষেত্রে আপনকে উক্ত কোম্পানির জন্য কোন ভিডিও বানাতে হতে পারে বা তাদের কোন লিংক আপনার ডেসক্রিপশনে রাখতে হতে পারে না হয় তাদের কোন পণ্যের রিভিউ দিতে হতে পারে।
Website ট্রাফিক :-
আপনি যে টপিক নিয়ে চ্যানেল খুলবেন ঐ টপিক রিলেটেড একটি Website খুলবেন। Website এও Google adsence এর বিভিন্ন এড দেওয়া যায় যেমন ব্যানার এড, text এড ইত্যাদি।
যদি আপনার website এ এডসেন্স এড থাকে তাহলে প্রতি ভিজিটরের জন্য আয় করতে পারবেন যেমনটা করতে পারতেন ইউটিউব ভিডিওতে। আর আপনি আপনার ইউটিউব ভিডিওর ডেসক্রিপশনে আপনার ওয়েবসাইট লিংক দিতে পারেন।
সেক্ষেত্রে যারা ভিডিও দেখবে তারা ওয়েব সাইটে ও ভিজিট করবে আর আপনার ইউটিউব আয়কে করবে দ্বিগুণ।
আপনি বিভিন্ন ওয়েবসাইট এডমিন থেকেও sponsorship পেতে পারেন।
আপনার মনে উদিত কিছু প্রশ্ন
প্রশ্ন: আমার চ্যানেলটি মনিটাইজেশন হয় না। এর কারণ কি?
উত্তর: চ্যানেল মনিটাইজেশন চালু না হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। ইউটিউবের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড ও গুগলের এডসেন্সের প্রতিটি নিয়ম না মানলে চ্যানেল মনিটাইজেশন হবে না।
প্রশ্ন: অনিয়ম হলে কি মনিটাইজেশন হারাতে পারি?
উত্তর: অবশ্যই। টানা ছয় মাস কোনো ভিডিও আপলোড না করলে আপনার চ্যানেল এর মনিটাইজেশন বন্ধ করে দেওয়া হবে।
প্রশ্ন: ইউটিউব প্রতি ১০০০ ভিউতে কত টাকা দেয়?
উত্তর: যারা ইউটিউবে নতুন তারা এই প্রশ্নটিই বেশি করে থাকেন। ইউটিউব আসলে ভিউ তে কোন টাকা দেয়না। আপনার ভিডিও মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ হলেও কোন টাকা পাবেন না যদি আপনি ভিডিওতে কোনো এড না আসে। গুগল এডসেন্স মূলত ইউটিউব ভিডিওতে এড দেখানো বা এড এ ক্লিক করার মাধ্যমে কন্টেন্টে ক্রিয়েটরদের টাকা দিয়ে থাকে।
আর ইউটিউব প্রতি ১০০০ ভিউতে কত টাকা দিবে এর কোনো নির্দিষ্ট হিসাব নেই। ইউটিউব এর ইনকাম কম-বেশি নির্ভর করে ইউটিউব ভিডিও দেখার লোকেশন ও ভিডিও ক্যাটাগরি। যেমন বাংলাদেশের গুগোল অ্যাডসেন্সে সিপিসি আর আমেরিকার গুগল অ্যাডসেন্সের সিপিসিতে অনেক ব্যবধান।
প্রশ্ন: আমার চ্যানেল google এর কোন নীতি ভঙ্গ করে তা জানার উপায় আছে কি?
উত্তর: আছে। আপনার চ্যানেলের রিজেক্টট ইমেইলে কারণ বলা থাকবে।
প্রশ্ন: একবার মনিটাইজেশন আবেদন বাতিল হলে আবার আবেদন করা যায় কি
উত্তর: যায়। তবে মনিটাইজেশন আবেদনের জন্য ৩০ দিন অপেক্ষা করতে হবে।
প্রশ্ন: চ্যানেল মনিটাইজ হলে কি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আয় হবে?
উত্তর: না। সার্চের সাথে মনিটাইজেশনের কোন সম্পর্ক নেই। চ্যানেলের ভিউ বাড়ানোর দায়িত্ব youtube এর নয় এটা সম্পূর্ণ আপনার।
প্রশ্ন: আমার ১৮ বছর বয়স হয়নি। আমি কি মনেটাইজেশন চালু করতে পারব?
উত্তর: মনিটাইজেশনের একটি অংশ আপনি চালু করতে পারবেন । সেটা হল এট রিভিনিউ। তবে আপনি আপনার বাবা অথবা মায়ের আইডি কার্ডের তথ্য ব্যবহার করে মনিটাইজেশন চালু করতে পারেন।
প্রশ্ন: কত সাবস্ক্রাইব হলে ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করা যায়?
উত্তর: ৫০০ সাবস্ক্রাইব & ৪০ হাজার ওয়াচ টাইম হলে ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করা সম্ভব।
প্রশ্ন: ইউটিউবে মনিটাইজেশন পাওয়ার জন্য কি কি ক্রাইটেরিয়া ফুল ফিল করতে হয়?
উত্তর: ইউটিউবে মনিটাইজেশন পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কিছু ক্রাইটেরিয়া আছে। এগুলো ক্রাইটেরিয়া যদি আপনি ফুলফিল করতে পারেন তাহলে আপনি মনিটাইজেশনের জন্য এপ্লাই করতে পারবেন। এপ্লাই করার পর আপনার চ্যানেলটি যদি অ্যাপ্রুভ হয়ে যায় তারপর আপনি গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে অথবা এড এর মাধ্যমে ইনকাম করতে পারবেন। নিচে ইউটিউব মনিটাইজেশন এর ক্রাইটেরিয়া উল্লেখ করা হলো।
আপনি দুইটি উপায়ে মনিটাইজেশন করতে পারবেন একটি হল লং ফরমেট ভিডিওর জন্য এবং শর্ট ফর্ম এর ভিডিওর জন্য। লং ফরমেট ভিডিও জন্য আপনার কে ৫০০ ফলোয়ার এবং ৩০০০ ঘন্টা ওয়াচটাইম প্রয়োজন হবে। শর্ট ফরমেট অথবা শর্ট ভিডিওর জন্য আপনার কে ৩ মিলিয়ন ভিউ প্রয়োজন হবে আপনার শর্ট ভিডিওতে।
এই সকল ক্রাইটেরিয়া ফুল ফিল করলে আপনি মনিটাইজেশন এর জন্য এপ্লাই করতে পারবেন, এপ্লাই করার পর আপনার মনিটাইজেশন এপ্রুভ হয়ে গেলে আপনি সেখান থেকে টাকা ইনকাম করতে শুরু করবেন।
সর্বশেষ
অনলাইনে আয়ের ক্ষেত্রে আপনাকে মাথায় রাখত হবে যদি আপনি মানুষকে ভালো কিছু দিতে পারেন তারপরেই আপনি ভালো কিছু আসা করতে পারেন। ভিডিও সবাই বানাই কিন্তু সবার ভিডিওর ভিউস হয় না যারা ভালো কিছু ভিডিও বানায় তাদের ভিডিওই ভালো ভিউস পায়, রেংক হয়, ভাইরাল হয়।
তাই এমন কিছু করুন যেটা সকলের ভালো লাগবে এবং যেটি আপনার প্রশংসার দাবিদার হবে। আর মনে রাখবেন সততা থেকে সুন্দর কিছুই পৃথিবীতে নেই।
ধৈর্য :
ইউটিউবিং হলো ছোট খাটো একটা ব্যবসার মতো এই ব্যবসায় আপনি যদি ধৈর্য ধারন করতে পারেন তাহলে এটি একদিন না একদিন অনেক বড় ব্যবসায় পরিণত হয়।
কোন ব্যবসা যেমন একদিনে দাড়ায় না তেমনি কোন ইউটিউব চ্যানেল একদিনে গ্রো হয় না। আপনাকে দিনের পর দিন লেগে থাকতে হবে এবং মানুষকে ভালো কিছু দিতে তবেই আপনি মানুষের প্রশংসার পাত্র হবেন। সুতরাং ধৈর্য হারাবেন না।
Post a Comment