ছাত্রজীবনে আয় করার পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন

আপনি যদি সত্যিই একজন স্টুডেন্ট হয়ে থাকেন এবং অনলাইনে আয় করার চিন্তাভাবনা করেন। তাহলে এই পোস্টটি শুধুমাত্র আপনার জন্য। অনলাইন আর্নিং এখন সবার কাছে অনেক বেশি পরিচিত এবং অনলাইন আর্নিং-এর দাঁড়া ঘরে বসে বসে টাকা উপার্জন করা অত্যন্ত সহজ হয়ে গেছে। সব মানুষই এখন প্রায় ঘরে বসে বসে অনলাইন আয় করছে। 
ছাত্রজীবনে আয় করার পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন

ছাত্রজীবনে নিজের আয় থাকলে অনেকক্ষেত্রে তা কাজে আসতে পারে। পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময়ে ছাত্ররা বিভিন্ন কাজ করে অনলাইন থেকে টাকা আয় করতে পারে। কাজগুলো অনেক সহজ এবং অল্প সময়ে করা যায়। অনেকেই জানেনা কিভাবে অনলাইন থেকে আয় করতে হয়। বিভিন্ন মাধ্যমে অনলাইন থেকে আয় করা যায় এবং তার মধ্য থেকে ছাত্রদের জন্য অনলাইনে আয় করার সেরা কিছু উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

১/ অনলাইন বা অফলাইন টিচিং

আপনি যদি কোনো বিষয়ে খুব ভালোভাবে দক্ষতা হয়ে থাকেন, তবে উক্ত বিষয় অন্যদের শিখিয়ে ছাত্রজীবনে আয় করতে পারেন। এই শেখানোর বিষয় হতে পারে কোনো ডিমান্ডিং স্কিল কিংবা সাধারণ পড়ালেখার কোনো বিষয় বা আপনি যেটা নিয়ে পড়তেছেন। অনলাইনে বা অফলাইনে টিচিং এর পাশাপাশি বিভিন্ন দক্ষতানির্ভর কোর্স তৈরী করে তা বিক্রি করে আয় করা যায়।

জানা জরুরী: ধরলাম আপনি যে বিষয়ে দক্ষ সে বিষয়ে একটি কোর্স বা টিউটোরিয়াল তৈরি করলেন। কোর্স বা টিউটোরিয়াল নিশ্চয়ই ভিডিও করে হবে। এখন এই ভিডিও দিয়ে আপনাকে আয় করার জন্য ইউটিউব বা ফেসবুক অথবা একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। ধরলাম এগুলোও তৈরি করলেন। এখন আপনাকে আয় করার জন্য মনিটাইজেশন চালু করতে হবে। এখন মনিটাইজেশন চালু করার জন্য কিছু শত পূরণ করতে হবে। যে শর্তগুলো পূরণ করা একজন ছাত্রের পক্ষে অসম্ভব।

২/ ব্লগিং বা ওয়েবসাইট তৈরীর মাধ্যমে

ওয়েবসাইট তৈরী করে একাধিক উপায়ে ছাত্রজীবনে আয় করা সম্ভব। প্রথমত ব্লগ তৈরী করে উক্ত ব্লগে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে আয় সম্ভব। এছাড়া স্পন্সরড পোস্ট থেকে আয় করা যায়। ওয়েবসাইট থেকে আয়ের ক্ষেত্রে বেশ কিছুদিন ধৈর্য ধরে কাজ করা লাগে। তাই আপনার হাতে যদি যথেষ্ট সময় থাকে, তবে ছাত্রজীবনে ওয়েবসাইট গড়ে তোলার কাজে নামতে পারেন। প্রতিদিন অল্প কিছু সময় প্রদান করে কয়েক মাসের মধ্যে একটি ওয়েবসাইট আয় করার মত অবস্থায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব।

জানা জরুরী: ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য প্রথমে একটি ডোমিন কিনতে হবে। নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে কতগুলো ইউনিক পোস্ট করতে হবে। আয় করার জন্য তাদের কমিউনিটি গাইডলাইন পূরণ করতে হবে। তবে আপনি আয় করতে পারবেন।

৩/ ইউটিউব এর মাধ্যমে

যেকোনো ব্যক্তি একটি ইউটিউব চ্যানেল শুরু করতে পারে। তবে ইউটিউব চ্যানেল খুলেই উক্ত চ্যানেল থেকে আয় শুরু হবে এমনটা ভাবা সম্পূর্ণ বোকামি। ইউটিউবে নিয়মিত ভিডিও আপলোড করতে থাকলে ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম এর পাশাপাশি আরো বিভিন্ন উপায়ে ইউটিউব থেকে আয় সম্ভব। এছাড়াও ইউটিউবিং থেকে অর্জিত বিভিন্ন দক্ষতা, যেমনঃ ভিডিও এডিটিং ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে বা কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য করে আয় করা যায়।

জানা জরুরী: বর্তমানে ইউটিউবে কম্পিটিশন অনেক হাই। চ্যানেল তৈরি করার পর সেখানে আপনাকে ভালো মানের ভিডিও আপলোড করতে হবে। যদি ভিডিওর কোয়ালিটি ভালো না হয় তাহলে পাবেন না। আরো অনেক রুলস এন্ড রেস্ট্রিকশন আছে যেগুলো বললাম না।

৪/ ডোমেইন কেনা-বেচা

ডোমেইন ফ্লিপিং একটি সেরা আয়ের পথ হতে পারে যদি আপনি ঠিকমত এই কাজ করতে পারেন। ডোমেইন কেনা-বেচা থেকে আয় করতে প্রথমে কোনো সম্ভাবনাময় ডোমেইন কিনতে পারে GoDaddy বা Namecheap এসব সাইট থেকে। খুব কম খরচে ডোমেইন কেনা যায়, যা পরবর্তীতে কয়েকশো গুণ দামে পর্যন্ত বিক্রি করা সম্ভব। তবে ডোমেইন কেনার ক্ষেত্রে যেসব ডোমেইন ভবিষ্যতে ভালো অর্থের বিনিময়ে বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে, সেসব ডোমেইন যাচাই-বাছাই করে কেনা উচিত।

৫/ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে 

বর্তমানে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং অনেক জনপ্রিয়। অ্যাফিলিয়েট মার্কেট হতে পারে ছাত্রজীবনে আয়ের অন্যতম একটি উপায়। সোশ্যাল মিডিয়াতে যদি আপনার যথেষ্ট পরিচিতি থাকে বা আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইট থাকলে সেক্ষেত্রে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং আয়ের একটি অসাধারণ উপায় হতে পারে। তবে এর সাথে একটি ফেসবুক পেজ বা গ্রুপও থাকতে হবে।

৬/ অনলাইন ব্যবসা

এই অনলাইন ব্যবসা করার আগে অবশ্যই আপনার মূলধন থাকতে হবে। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মের কল্যাণে বেশ সহজে একটি অনলাইম স্টোর সেটাপ করা যায়। চাইলে এই ফিচারগুলোকে কাজে লাগিয়ে নিজের কোনো একটি ব্যবসা দাঁড় করিয়ে ফেলতে পারেন। এতে ফিজিক্যাল স্টোর পরিচালনার বা সময় মেনে চলার মত কোনো সমস্যা থাকছেনা। শুধুমাত্র প্রোডাক্টের অর্ডার আসলে তা কাস্টমারের নিকট পৌছে দেওয়া হচ্ছে অনলাইন ব্যবসার কাজ। আর প্রোডাক্ট এর গুণগত মান ঠিক রাখতে হবে। তাই ছাত্রজীবনে অনলাইন ব্যবসা শুরু করা বেশ লাভজনক হতে পারে।

জানা জরুরী: এই অনলাইন ব্যবসা করার আগে অবশ্যই পেশাদারদের পরামর্শ নিতে হবে। শখের বেশ বা টাকা লোকে এই কাজ করতে যাবেন না। সবদিক ভালোভাবে বিবেচনা করবেন।

৭/ নোটস সেল করা

আপনার নোটস বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থীদের সাথে শেয়ার করে আয় করতে পারেন বাড়তি অর্থ। সেটা হতে পারে বিভিন্ন বিষয়ের উপর নোট। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে দামসহ নোট আপলোড করা যায় ও অন্যান্য শিক্ষার্থীরা উক্ত নোট ডাউনলোড করলে তা থেকে অর্থ পাওয়া যায়। অনলাইনে নোট সেল করার অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে। তার মধ্যে জনপ্রিয় দুটি ওয়েবসাইট হলো Nexus Notes ও Stuvia। এসব ওয়েবসাইটে যে কেউ বিনামূল্যে নোটস আপলোড করতে পারে। নোট থেকে প্রাপ্ত লাভের অংশ আপনার সাথে শেয়ার করবে এসব ওয়েবসাইট।

৮/ রাইটিং

ফ্রিল্যান্স রাইটিং একটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং পেশা। তবে এ কাজের জন্য অবশ্যই আপনাকে ইংরেজি ভাষাগত দক্ষতা থাকতে হবে। বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা ব্লগের পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে রাইটিং এর কাজ পাওয়া যায়। আর প্রায় যেকোনো বিষয়ে ফ্রিল্যান্সিং রাইটিং করা যায়। এছাড়াও আপনার গ্রামার ও ভাষা সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা থাকলে এডিটিং বা সম্পাদনার কাজ করেও বেশ ভালো মানের অর্থ আয় সম্ভব। তবে এ আয় করাটা সম্পূর্ণ আপনার রাইটিং এর উপর নির্ভর করে।

গ্রাফিক ডিজাইন

গ্রাফিক ডিজাইন একটি জনপ্রিয় সেবা ও এর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে সম্পূর্ণ বিশ্বে। এই গ্রাফিক্স ডিজাইন দিয়ে অনেক কাজ করা যায়। ছাত্র হিসেবে কোনো প্রতিষ্ঠানে পার্ট টাইম ডিজাইনার হিসেবে কাজ নিতে পারেন। এছাড়াও বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ করে আয় করতে পারেন।

জানা জরুরি: গ্রাফিক্সের কাজ করার জন্যই অবশ্যই একটি কম্পিউটার থাকতে হবে। তার সাথে নেটওয়ার্ক সংযোগ। 

অন্যান্য

আমি যেগুলো আলোচনা করলাম এগুলো বাদে আরো অনেক মাধ্যম রয়েছে আয় করার। যেগুলো আপনি গুগলে সার্চ দিলেই সহজেই পেয়ে যাবেন।

সর্বশেষ

আপনি নিশ্চয়ই ধরতে পেরেছেন যে, "ছাত্রজীবনে আয় করার পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন" সম্পর্কে আলোচনার কোন মিল নেই। সত্যি কথা বলতে কি বাস্তবতা অনেক কঠিন। বর্তমানে সব জায়গায় কম্পিটিশন অনেক হাই। যেখানে প্রচুর শ্রম এবং ধৈর্যের মাধ্যমে টিকে থাকতে হয়। তার পাশাপাশি নিয়মিত তো কাজ করতেই হয়। এখন প্রশ্ন হলো উপরে আমি এ বিষয়গুলো নিয়ে কেন আলোচনা করলাম? আপনারা একটি বিষয় খেয়াল করে দেখেছেন যখন আপনি ছাত্র জীবনে আয় সম্পর্কে সার্চ করবেন। তখন অনেকগুলো পোস্ট পাবেন যেখানে ছাত্রজীবনে আয় করার মাধ্যম বলা থাকে। এখন তারা যে মাধ্যমগুলো বলে থাকে আয় করার জন্য সেটা কতটা যৌক্তিক। তারা যত সহজ ভাবে বলে থাকে বিষয়টা তত সহজ না। ওই জায়গাগুলোতে আপনাকে কাজ করতে হলে প্রচুর সময় এবং পরিশ্রম করতে হবে। এবং কি আপনি এখান থেকে ক্যারিয়ারও করতে পারেন। যাইহোক পড়াশুনা আর আয় দুইটা সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। এখন আপনি যদি আয় করতে চান তাহলে পড়াশোনা আপনার গোল্লায় চলে যাবে। আর যদি আপনি পড়াশোনা করতে চান তাহলে অনলাইন থেকে আয় চিন্তাটা মাথা থেকে ছাড়ে ফেলুন। এখন আপনি যদি মনে করেন পড়াশোনার পাশাপাশি আমি ইনকাম করতে পারব এখন বিষয়টা সম্পূর্ণ আপনার উপর ছেড়ে দিলাম। মূলত সতর্কতা করার জন্যই এই আর্টিকেলটি করা হয়েছে। সবাই ভালো থাকবেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post