নতুন স্মার্টফোন কেনার পর যে কাজগুলো অবশ্যই করতে হবে

নতুন একটি স্মার্টফোন কেনার পর নিঃসন্দেহে সবার জীবনের আনন্দদায়ক একটি মুহুর্ত হয়। আপনি যদি নতুন স্মার্টফোন কিনে থাকেন তাহলে সেই স্মার্টফোনে আপনার এমন কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো করলে আপনার এন্ড্রয়েড ফোনটি বেশিদিন ব্যবহার করতে পারবেন। সেই সাথে আপনার স্মার্টফোনের কোন ধরনের সমস্যা দেখা দিবে না।
নতুন স্মার্টফোন কেনার পর যে কাজগুলো অবশ্যই করতে হবে

নতুন ফোন কেনার পর করণীয় কিছু বিষয় রয়েছে যা ফোন ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করবে। আর ব্যক্তিগতভাবে আপনিও সুরক্ষিত থাকবেন। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক নতুন স্মার্টফোন ফোন কেনার পর করণীয় বিষয় সম্পর্কে। 

১/ ফোনের বক্স চেক করুন
ফোন কেনার পর অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সাথে প্রদত্ত বক্স আনবক্স করে চেক করবেন। আপনি জিজ্ঞেস করতে পারেন ফোন কেনার পর আপনি অবশ্যই আনবক্স করবেন, তবুও আমরা এটি কেনো করতে বলছি। এর কারণ হলো বেশিরভাগ সময় ফোন আর চার্জার বক্স থেকে বের করে বাকি কনটেন্ট আর চেক ই করা হয়না।

বেশিরভাগ সময় ফোনের বক্সে একটি সিলিকন কভার দেওয়া থাকে। এছাড়া টেম্পারড গ্লাসও দেওয়া থাকে অনেক ফোনের বক্সে। ওয়ারেন্টি কার্ড, সিম ইজেকশন টুল, ইত্যাদির দেখা মিলে বর্তমান স্মার্টফোনের বক্সে। তাই নতুন ফোন কেনার পর বক্স চেক না করা অনেকটা বোকামির পর্যায়ে পড়ে।

মোবাইলটি যদি অনলাইন থেকে ক্রয় করে থাকেন সেক্ষেত্রে ডেলিভারি পাওয়ার পর অবশ্যই ভালো ভাবে বাক্সটির ভেতরে যাচাই করে নিন, সব কিছু ঠিকঠাক আছে কি-না। কারণ বেশিরভাগ সময় দেখা যায় যে আমি যে মোবাইলটি অর্ডার দিয়েছিলেন সেই মোবাইলটির বদলে অন্য মোবাইল দেওয়া হয়েছে।

বাক্সটি খুলে দেখুন কোন ত্রুটি আছে কিনা। কোন সমস্যা থাকলে তা ফেরত দেওয়ার সুযোগ থাকে। তাই ডেলিভারি নেওয়ার পূর্বে যাচাই করে নিন।

২/ ওয়ারেন্টি চেক করুন
অফিসিয়াল স্মার্টফোন কেনার ক্ষেত্রে দেশের প্রতিটি স্মার্টফোন ব্র‍্যান্ড ওয়ারেন্টি প্রদান করে থাকে। এমনকি আনঅফিসিয়াল ফোন কিনলেও যেকোনো ধরনের ওয়ারেন্টি বা সিকিউরিটি বুঝে নিতে ভুলবেন না। আপনার ফোনের বাড়তি আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান করে ওয়ারেন্টি, তাই ওয়ারেন্টিকে হালকা ভাবে নেওয়া উচিত নয়।

৩/ IMEI নাম্বার সংরক্ষণঃ
নতুন মোবাইল কিনে IMEI নাম্বার সংরক্ষণ করা সব থেকে জরুরি কাজগুলোর মধ্যে একটি কাজ। অনেকে আছেন যারা নতুন ফোন কিনে আই এম ই আই নাম্বার সংরক্ষণ করতে ভুলে যান বা অবহেলা করেন। মোবাইল কেনার সাথে মোবাইলের বাক্সে বা মোবাইলের খামের গায়ে IMEI নাম্বার লেখা থাকে। যদি আপনি আইএমই নাম্বার সংরক্ষণ করতে না চান অন্ততপক্ষে বক্সটি ভালভাবে সংরক্ষণ করে রাখুন।

কেনো IMEI নাম্বার সংরক্ষণ করতে হয়ঃ
আমরা শখের বসে বা নানান প্রয়োজনে অনেক দামি মোবাইল কিনি। কিন্তু এই দামি মোবাইল অনেক সময় চুরি হয়ে যায় বা ছিনতাই হয়। তখন আমাদের খুবই কষ্ট লাগে। কিন্তু তখন যদি আপনার কাছে আপনার মোবাইলের IMEI নাম্বারটি সংরক্ষণ করা থাকে তাহলে থানায় যেয়ে জিডি (GD) বা মামলা করে আসতে পারবেন। কিন্তু যদি আপনি IMEI নাম্বার কোথাও সংরক্ষণ না করেন তাহলে আপনার মোবাইল চুরি হয়ে গেলেও কোন পদক্ষেপ নিতে পারবেন না।

জানা জরুরি: যে মোবাইলে ২ টা সিম চালানো যায় সেই মোবাইলে IMEI নাম্বার দুইটা থাকে। তাই *#06# ডায়াল করার পরে যখন আপনার মোবাইলে IMEI নাম্বার দেখা যাবে তা কোথাও লিখে সংরক্ষণ করে রাখুন। যাতে ভবিষ্যতে কোন সমস্যা হলে এটি কাজে লাগে।

৪/ মোবাইলটি সম্পূর্ণ চার্জ করুন
নতুন ফোন কেনার পর ফোনে যদি ১০০% চার্জ না থাকে তাহলে ফোনটি চার্জে দিতে হবে। ১০০% না হওয়া পর্যন্ত ব্যবহার করবেন না। অনেকে নতুন পাওয়া মাত্র ব্যবহার করা শুরু করে। এতে করে ব্যাটারি ক্ষতিগস্ত হওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশি থাকে। বিশেষ করে ব্যাটারির কর্মক্ষমতা কমে যেতে পারে। মোবাইল চার্জ দেওয়ার সঠিক নিয়ম মেনে চার্জ দিলে দীর্ঘদিন ভাল ব্যাটারি লাইফ পাবেন।

মোবাইলের ব্যাটারি দীর্ঘদিন ব্যবহার উপযুক্ত করতে কিনার সাথে সাথে ১০০% চার্জ দিন। নতুন মোবাইল নিজের ইচ্ছে মতো সেটিং করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। তাই কাজের বিঘ্ন যেন না ঘটে তার জন্য মোবাইল চার্জ দিতে হবে।

৫/ গুগল একাউন্ট সেটাপ করুন
অ্যান্ড্রয়েড ফোনের অধিকাংশ ফিচার নির্ভর করে গুগল সার্ভিসের উপর। আর গুগল সার্ভিস ব্যবহারে প্রয়োজন গুগল একাউন্টের। তাই নতুন অ্যান্ড্রয়েড ফোন কেনার পর গুগল একাউন্ট যুক্ত করা একান্ত জরুরি। গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট থেকে শুরু করে অ্যান্ড্রয়েড এর কোর ফাংশনসমূহ ব্যবহারে গুগল একাউন্টে লগিন থাকা বাধ্যতামূলক।

অ্যান্ড্রয়েড ফোন প্রথমবার চালু করার পর বা রিসেট করার পর ফোনের গুগল একাউন্টে লগিন করতে বলা হয়। আপনি যদি উক্ত ধাপে গুগল একাউন্টে লগিন স্কিপ করেন, তবে আপনার উচিত গুগল একাউন্টে লগিন করে ফেলা।

যেকোনো ফোনে গুগল একাউন্ট যুক্ত করা বেশ সহজ ও একাধিক উপায় রয়েছে। ফোনের সেটিংসে প্রবেশ করে Account সেকশন থেকে Add Account সিলেক্ট করে কয়েক ধাপে একদম সহজভাবে গুগল একাউন্টে লগিন করা যাবে।

৬/ ফাইন্ড মাই ডিভাইস চালু করুন
নতুন ফোন হারিয়ে গেলে খুঁজে পাওয়া বেশ মুশকিল। এমন অবস্থার কথা মাথায় রেখে অ্যান্ড্রয়েডে “ফাইন্ড মাই ডিভাইস” ফিচারটি রাখা হয়েছে। এই ফিচারটি চালু করেছে গুগল। এর ফিচার সম্পর্কে অনেক স্মার্টফোন ব্যবহারকারী জানে না। এই ফিচার চালু করে রাখলে হারিয়ে যাওয়া বা খুঁজে না পাওয়া অ্যান্ড্রয়েড ফোনের লোকেশন জানা যাবে মূহুর্তের মধ্যে। ডিভাইসের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবার উচিত এই ফিচারটি ব্যবহার করা।

৭/ সিস্টেম আপডেট করুন
বেশিরভাগ সময় নতুন ফোনে সিস্টেম আপডেট পেন্ডিং থাকে। তাই নতুন ফোন কেনার পর অ্যান্ড্রয়েড আপডেট প্রদান করুন। আপডেটের সাথে ফোনে নতুন ফিচার আসে ও সাথে কোনো বাগস (Bugs) থাকলে সেগুলো ফিক্স হয়ে যায়। সিস্টেম আপডেট করার জন্য আপনার পর্যাপ্ত এমবি থাকতে হবে। আর ওয়াইফাই থাকলে তো কোন সমস্যাই না।

৮/ ডিভাইসের নিরাপত্তা সেট করুন
ফোনে থাকা ব্যক্তিগত ডাটা ও ফাইল এর সুরক্ষা সবাই নিশ্চিত করতে চায়। বিশেষ করে ব্যক্তিগত চ্যাট যেকোনো কাউকে দেখার সুযোগ করে দিতে কেউই চায় না। তাই ফোনের সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে ফোন বায়োমেট্রিক বা সাধারণ যেকোনো লকস্ক্রিন মেথড ব্যবহার করা উচিত। তবে এ কাজটি আপনি যদি না জানেন একাই একাই করবেন না। আগে সবকিছু জানে বুঝে কাজ করতে হবে।

যেকোনো অ্যান্ড্রয়েড ফোনে বেশ সহজে স্ক্রিন লক সেট করা যাবে। প্যাটার্ন, পিন বা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা যাবে স্ক্রিন লক হিসাবে। তবে ফেস আনলক বা ফিংগারপ্রিন্ট লক ব্যবহার করতে হলে প্যাটার্ন, পিন বা পাসওয়ার্ড সেট করা আবশ্যক।

এছাড়া ও আপনি চাইলে আলাদা আলাদা ভাবে আপনার প্রয়োজনীয অ্যাপ গুলোতে যেমন: ফেসবুক, মেসেঞ্জার, গ্যালারি ইত্যাদিতে অ্যাপলক ব্যবহার করতে পারেন। এর ফলে কেউ আপনার মোবাইল কোন কাজে ব্যবহার করলে ও আপনার গুরুত্বপূর্ণ ম্যাসেজ, ছবি, ভিডিও নিরাপদ থাকবে।

৯/ ব্লোটওয়ার রিমুভ করুন
বর্তমানে বেশিরভাগ ফোনে আগে থেকে অসংখ্য দরকারী ও অদরকারি অ্যাপ ইন্সটল করা থাকে, এসব অ্যাপসমূহকে ব্লোটওয়্যার বলে। আপনি চাইলে এসব রেখেও দিতে পারেন এটা সম্পূর্ণ আপনার উপর ডিপেন্ডেন্ট। ফোন কেনার পরে ব্লোটওয়্যার অ্যাপসমূহ আনইন্সটল করে ফেলুন। ফোনের সেটিংস থেকে অ্যাপের তালিকার মেন্যু খুঁজে পাবেন। সেখান থেকে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপসমূহ বেশ সহজে নতুন স্মার্টফোন থেকে মুছে দিতে পারেন। ফোনের অ্যাপ ড্রয়ার খালি হওয়ার পাশাপাশি স্টোরেজও খালি হয় ব্লোটওয়্যার রিমুভ করলে। তবে কিছু কিছু অ্যাপ সম্পূর্ণরুপে ডিলিট করা যায় না, শুধুমাত্র ডিসেবল করা যায়।

১০/ ব্যাকাপ সেটাপ করুন
স্মার্টফোনে ব্যাকাপ নেওয়ার সুবিধাকে তেমন গুরুত্ব সহকারে দেখাই হয়না বা জানি না। তবে ফোনে থাকা ব্যক্তিগত ডাটার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দরকার নিয়মিত ব্যাকাপ। কনটাক্টস, ফোন লগ, এসএমএস, অ্যাপ ও অ্যাপের ডাটা যাতে ফোন রিসেটের সাথে বা অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো কারণে মুছে না যায়, তাই স্মার্টফোন ব্যাকাপ নেওয়া একান্ত জরুরি।

১১/ প্রয়োজনীয় অ্যাপ ইন্সটল করা
আগের ডিভাইস ব্যাকাপ নিয়ে রাখলে ও ব্যাকাপ ডাটা রিস্টোর করলে পূর্বে ব্যবহার করা সকল অ্যাপ ইতিমধ্যে ফোনে চলে আসবে। তবে ব্যাকাপ না থাকলে সেক্ষেত্রে নতুন ফোনে ম্যানুয়ালি প্রয়োজনীয় অ্যাপসমূহ ইন্সটল করে নেওয়া উচিত। এছাড়াও অপ্রয়োজনীয় অ্যাপসমূহ মুছে ফেলার পরামর্শ তো ইতিমধ্যে জেনে গিয়েছেন।

১২/ নোটিফিকেশন সেটিংস ঠিক করুন
নতুন ফোন কেনার পর যেকোনো অ্যাপ ইন্সটল করার পর ফোনের নোটিফিকেশন সেন্টার উক্ত অ্যাপের নোটিফিকেশনে ভরে যাওয়া স্বাভাবিক। তাই নতুন ফোন কেনার পর ফোনের নোটিফিকেশন সেটিংস ঠিকমত এডজাস্ট করে নেওয়া খুবই জরুরি একটি বিষয়। 

যেসব অ্যাপের নোটিফিকেশন দরকার নেই, প্রয়োজন সেসব অ্যাপের নোটিফিকেশন অফ করে দিন। আপনার স্মার্টফোন ব্যবহারের অভিজ্ঞতা ব্যাপক হারে নির্ভর করে ফোনের নোটিফিকেশন সেটিংসের উপর, তাই এই ধাপকে ছোট করে দেখবেন না।

১৩/ ফোন কেস ব্যবহার করুন
নতুন ফোন কেনার পর কমবেশি সবার লক্ষ্য থাকে উক্ত ফোনকে নিরাপদ রাখা ও দীর্ঘ সময়ের জন্য ব্যবহার করতে পারা। সাধারণ ব্যবহারে যেকোনো দিন ফোন হাত থেকে ভুলে পড়ে গিয়ে যাতে ফোনের কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতি না হয়, তা নিশ্চিত করতে অবশ্যই নতুন ভালো মানের ফোনে কেস ব্যবহার করতে হবে। কেস আপনার ফোনকে স্ক্র‍্যাচ ও আঘাত থেকে বাঁচাবে। ফোন হাত থেকে পড়ে গেলেও গুরুতর আঘাত রুখবে ফোন কেস।

ফোনকে রক্ষা করতে ও ফোনের সৌন্দর্য বজায় রাখতে একটি মজবুত ও সুন্দর দেখতে কেস কিনতে ভুলবেন না যেন! এছাড়াও একটি স্ক্রিন প্রটেক্টর ও লাগিয়ে নেওয়া উচিত, যাতে ফোন হাত থেকে পড়ে গেলেও স্ক্রিন সুরক্ষিত থাকে।

সর্বশেষ

একটি স্মার্ট ফোন কেনার পর মোটামুটি যে কাজগুলো করতে হয় সে সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হল। এই আর্টিকেলটি আপনার কেমন লাগলো সে সম্পর্কে কমেন্টে জানান।

Post a Comment

Previous Post Next Post